Geography
মেঘ কাকে বলে | বিভিন্ন প্রকার মেঘের বৈশিষ্ট্য ও ছবি | অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল মেঘ বৃষ্টি থেকে প্রশ্ন উত্তর
মেঘ কাকে বলে ২০২২ ও ২০২৩, প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমরা আলোচনা করব ক্লাস অষ্টম এর ভূগোল বিষয়ের মেঘ-বৃষ্টি চ্যাপ্টারের প্রশ্ন উত্তর । আশা করি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকার মেঘের বৈশিষ্ট্য ও ছবি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন ।
প্রিয় দর্শক, আপনাদের একান্ত সহযোগীতার জন্য অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল মেঘ বৃষ্টি থেকে প্রশ্ন উত্তর সমস্ত বিষয় আমি তুলে ধরেছি আশা করছি আপনারা অনেক বেশি উপকৃত হবেন ।
মেঘ কাকে বলে | বিভিন্ন প্রকার মেঘের বৈশিষ্ট্য ও ছবি | অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল মেঘ বৃষ্টি থেকে প্রশ্ন উত্তর |
মেঘ কাকে বলে?
আকাশের একটা সৌন্দর্য রূপ হলো মেঘ। সূর্যের উচ্চ তাপের কারণে, ভূ-পৃষ্ঠে সাগর, নদী নালা, পুকুর, খাল-বিল সূর্যের প্রচন্ড তাপে এই নির্দিষ্ট জল গুলো জলীয় বাষ্পে রুপান্তিরিত হয়।
হালকা জলীয় বাষ্প ধীরে ধীরে আকাশে উঠার সাথে সাথে তা শীতল ও ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জল গুলো বাষ্প কণায় পরিণত হয় এবং বাতাসে ভাসতে থাকে। ঠিক তাকেই মেঘ কাকে বলে। (মেঘ বৃষ্টি অষ্টম শ্রেণী)
১. সিরাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- সাদা রঙের স্বচ্ছ মেঘের গুচ্ছ। বেশি উচ্চতার (ন্যূনতম উচ্চতা 20,000 ফুট) হালকা পালকের মতো দেখতে এই মেঘ পরিষ্কার আবহাওয়ার সূচক। সারা আকাশ এই মেঘে ঢাকা থাকলেও তার মধ্যে দিয়ে সূর্যকে দেখা যায়। এই মেঘের গঠন অনেকটা তন্তু বুননের মতো। ঘোড়ার ল্যাজের মতো দেখতে হওয়ায় একে ‘Mare’s Tail’ বলে ।
সিরাস মেঘের উদাহরণ:- সাধারণভাবে এই মেঘ পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে। কিন্তু যখন সিরাস মেঘ গুচ্ছাকারে একত্রিত হয়ে বন্ধনীর আকারে অবস্থান করে, তখন তা খারাপ আবহাওয়াকে সূচিত করে।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
2. সিরোস্ট্র্যাটাস কাকে বলে ?
উত্তরঃ- উচ্চ বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত পাতলা সাদা চাদরের মতো যে-মেঘ দেখা যায়, তাকে সিরোস্ট্যাটাস মেঘ বলে। অনেক সময় এই মেঘ চাঁদ আর সূর্যের চারপাশে বলয়ের আকারে অবস্থান করে। এই মেঘের আকাশকে অনেকটা দুধের মতো সাদা দেখায়। এই মেঘ আকাশে অবস্থান করলে অনেক সময় রামধনুর রং লক্ষ করা যায় ।
সিরোস্ট্র্যাটাসের উদাহরণ:- সিরোস্ট্যাটাস মেঘের অস্তিত্ব ঝড়ের সংকেত দেয়। এই মেঘ আকাশে দেখা গেলে ঝড়ের পূর্বাভাস লক্ষ করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
৩. সিরোকিউমুলাস কাকে বলে?
উত্তরঃ- বায়ুমণ্ডলের উচ্চস্তরে পেঁজা তুলোর মতো বা ম্যাকারেল মাছের পিঠের মতো গুচ্ছাকারে যে-মেঘ দেখা যায়, তাকে সিরোকিউমুলাস মেঘ বলে। এই মেঘে আকাশ ছেয়ে গেলে তাকে ম্যাকারেল আকাশ বলে। সুন্দরতম এই মেঘটি দলবদ্ধ, সারি কিংবা ঢেউখেলানো ভাবে ভেসে বেড়ায়।
এই মেঘ পৃথিবীতে ছায়ার সৃষ্টি করে না। সাধারণত সিরোকিউমুলাস মেঘ পরিষ্কার আবহাওয়াকে নির্দেশ করে। এই মেঘ আকাশে অবস্থান করলে কোনো ঝড়ের পূর্বাভাস লক্ষ করা যায় না। আকাশ পরিষ্কার থাকে।
সিরোকিউমুলাসের উদাহরণ:- পরিষ্কার আবহাওয়া এবং কোন প্রকার ঝড়ের আভাস পাওয়া যায় না।
৪. অল্টোস্ট্যাটাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- মাঝারি উচ্চতায় (গড় উচ্চতা 6,500 ফুট–20,000 ফুট) এই মেঘ লক্ষ করা যায়। ধূসর থেকে নীল রঙের এই মেঘ দেখতে অনেকটা তন্তুর মতো। এই মেঘের মধ্যে দিয়ে সূর্যকে অনেকটা অনুজ্জ্বল দেখায়।
এটি কিছুটা ঘন সিরোস্ট্র্যাটাস মেঘের মতো। অল্টোস্ট্যাটাস মেঘ সূর্য কিংবা চাঁদের আলো-কে কিছুটা ম্লান করে দেয়। সাধারণত সকালে বা অপরাহ্নে এই মেঘ দৃষ্টিগোচর হয়।
অল্টোস্ট্যাটাসের উদাহরণ:- সাধারণত এই মেঘ একটানা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয় মেঘ থেকে একটানা বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
৫. অল্টোকিউমুলাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- আকাশের মাঝারি উচ্চতায় এই মেঘ লক্ষ করা যায়। এই মেঘ দেখতে অনেকটা চ্যাপটা বা গোলীয় আকৃতি হয়। এই মেঘ সাদা থেকে ধূসর বর্ণের হয়ে থাকে। এই মেঘ আকাশে ঢেউয়ের মতো অবস্থান করে। এই মেঘের ফাঁকে ফাঁকে নীল আকাশ দেখা যায়।
অল্টোকিউমুলাসের উদাহরণ:- এই মেঘ মূলত পরিষ্কার আকাশ নির্দেশ করে। ঝড়ের কোনো পূর্বাভাস এই মেঘে লক্ষ করা যায় না
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
৬. স্ট্র্যাটোকিউমুলাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- নিম্ন আকাশে স্ট্যাটোকিউমুলাস মেঘ লক্ষ করা যায়। এই মেঘ দেখতে অনেকটা স্তূপের মতো ও স্তরে স্তরে সাজানো থাকে। অনেক সময় দেখে মনে হয় স্তরগুলি যেন গড়িয়ে চলেছে। তাই এই মেঘের আরএক নাম Bumpy cloud। এই মেঘ কিছুটা উজ্জ্বল ধসর প্রকৃতির হয়। একটি নির্দিষ্ট বিন্যাসে এই মেঘ সজ্জিত থাকে।
স্ট্র্যাটোকিউমুলাসের উদাহরণ:- সাধারণভাবে এই মেঘের আকাশ পরিষ্কার থাকে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা লক্ষ করা যায় না।
৭. স্ট্র্যাটাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- নিম্ন বায়ুমণ্ডলে এই মেঘ বিভিন্ন সারি সৃষ্টি করে অবস্থান করে। সাদা থেকে ধূসর রঙের এই মেঘ সারা আকাশকে কুয়াশার মতো ঢেকে রাখে। সাধারণত এই মেঘের নিম্নতল ভূপৃষ্ঠের কাছে থাকে। এটি সারা আকাশকে স্তরে স্তরে ঢেকে রাখে। পাহাড়ে উঁচু অংশে এই মেঘ জমলে পর্বতারোহী ও বিমানচালকদের পক্ষে খুব অসুবিধা হয়।
স্ট্র্যাটাসের উদাহরণ:- এই মেঘ থেকে মাঝে মাঝে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হয়। অনেক সময় একটানা বৃষ্টিপাতও লক্ষ করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
৮. নিম্বোস্ট্র্যাটাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- সাধারণভাবে বায়ুমণ্ডলের স্ট্যাটাস মেঘ যখন নিম্নগামী হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়,তাকেনিম্নোস্ট্যাটাস মেঘ বলে। এটি ঘন কালো রঙের দেখতে একপ্রকার মেঘ। এই মেঘ পুরু, ধূসর এবং আকারহীন হয়। এই মেঘ সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে দেয়। নিম্নেস্ট্যাটাস মেঘ খারাপ আবহা ওয়ার পূর্বাভাস দেয়।
নিম্বোস্ট্র্যাটাসের উদাহরণ:- আকাশের এই মেঘ থেকে অবিরাম ও প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এই মেঘে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক বেশি।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
৯. কিউমুলাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- বায়ুমণ্ডলে এই মেঘ উল্লম্বভাবে অবস্থান করে। এই উল্লম্ব মেঘ পুরু ও ঘন হয়। এই মেঘের উপরিভাগের আকার অনেকটা ফুলকপির মতো হলেও তলদেশ সমতল। এই মেঘের শীর্ষদেশ বেশ উঁচু, নিম্নাংশের রং কালো হলেও উপরিভাগের রং সাদা হয়। তলদেশ থেকে শীর্ষদেশের উচ্চতা অনেক বেশি। আকাশে বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করে।
কিউমুলাসের উদাহরণ:- বায়ুমণ্ডলে এই মেঘ মূলত পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে। এই মেঘ আকাশে থাকলে ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা লক্ষ করা যায় না।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
১০. কিউমুলোনিম্বাস মেঘ কাকে বলে?
উত্তরঃ- কিউমুলোনিম্বাস মেঘ যে-কোনো উচ্চতায় তৈরি হয়ে থাকে। এই মেঘ আকাশে উল্লম্বভাবে অবস্থান করে। অনেকটা গম্বুজের মতো দেখতে এই মেঘ সাদা ও ধূসর এবং কালো রঙের হয়। এই মেঘ ভূপৃষ্ঠের খুব কাছে অবস্থান করে, তবে এর আকৃতি ও উচ্চতা একটি বিশালাকৃতির পর্বতের মতো। সাধারণত ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে প্রায় 12,000 ফুট পর্যন্ত এই মেঘের উল্লম্ব বিস্তার দেখা যায়।
কিউমুলোনিম্বাসের উদাহরণ:- এই মেঘের উপর দিক চ্যাপটা ও তলদেশ প্রায় সমতল হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে উত্তর-পশ্চিম আকাশে এই মেঘ দৃষ্টিগোচর হয়। কিউমুলোনিম্বাস মেঘে বজ্রপাত সহ ভীষণ ঝড়-বৃষ্টি হয়। তাই এর আর-এক নাম বজ্রমেঘ। এই মেঘ থেকে প্রচণ্ড বহু-বিদ্যুৎ সহ ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন
১১. সম্পৃক্ত বায়ু কাকে বলে?
উত্তরঃ- কোনো নির্দিষ্ট উন্নতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু যতটা পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে সেই পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকলে ওই বায়ুকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে। এই বায়ুতে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প যুক্ত হলে তা ভূপৃষ্ঠেই ফিরে আসে। সম্পৃক্ত বায়ু হল এমনই এক বায়ু, যা জলীয় বাষ্প ধারণের সর্বোচ্চ মাত্রা নির্দেশ করে। বায়ুমণ্ডলীয় তাপমাত্রা শিশিরাঙ্কে পৌঁছালে বায়ু সম্পৃক্ত হয়। বৃষ্টি বা তুষারপাত সৃষ্টিতে সম্পৃক্ত বায়ুর যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে।
সম্পৃক্ত বায়ুর উদাহরণ:- সম্পৃক্ত বায়ু জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে এবং তুষারপাত সৃষ্টিতে
বিশেষ ভূমিকা পালন করে
১২. শিশিরাঙ্ক কাকে বলে?
উত্তরঃ- যে-তাপমাত্রায় কোনো বায়ু সম্পৃক্ত হয়, তাকে ওই বায়ুর ‘শিশিরাঙ্ক’ বলা হয়। যে-তাপমাত্রায় শিশিরাঙ্ক অবস্থার সৃষ্টি হয়, তাকে শিশিরাঙ্কের তাপমাত্রা বলে। কোনো স্থানের বায়ু ধীরে ধীরে শীতল হয়ে উন্নতা নির্দিষ্ট মানে পৌঁছালে ওই বায়ুতে উপস্থিত জলীয় বাষ্প দ্বারা বায়ু সম্পৃক্ত হয়ে ঘনীভবন প্রক্রিয়ায় শিশিরকণার সৃষ্টি হয়। শিশিরাঙ্কে বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা সর্বাধিক।
শিশিরাঙ্কর উদাহরণ:-এই স্তরে শিশিরকণা সৃষ্টি হয় ও বায়ু অপেক্ষায় আদ্রতা সর্বাধিক ।
১৩. আপেক্ষিক আর্দ্রতা কী?
উত্তরঃ- কোনো নির্দিষ্ট উন্নতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে যতটা জলীয় বাষ্প থাকে এবং সেই উন্নতায় ওই বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যতটা জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন হয় তাদের অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে। আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে শতকরা (%) হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
১৪. প্রতিবাত ঢাল কী?
উত্তরঃ- পর্বতের বা উচ্চভূমির যে-ঢালে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে ‘প্রতিবাত ঢাল’ বলা হয়।
১৫. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?
উত্তরঃ- প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর বায়ু যখন পর্বতের অনুবাত ঢালে পৌঁছায় তখন সেই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ যথেষ্ট কমে যায়। এ ছাড়া বায়ু যত নীচের দিকে ঢালের উন্নতর স্থানে নামতে শুরু করে, বায়ুর উয়তা তত বাড়তে থাকে। ফলে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বায়ু অসম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। এই কারণে অনুবাত ঢালে প্রতিবাত ঢাল বৃষ্টিপাত খুবই কম হয়।তাই পর্বতের অনুবাত ঢাল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল নামে পরিচিত ।
আমার শেষ কথা :– আশা করি, মেঘ বৃষ্টি অষ্টম শ্রেণী প্রশ্ন উত্তর গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গুলো জানতে পেরেছেন। একান্ত ভাবে, যদি মেঘ ও বৃষ্টি অধ্যায় এই পোস্টটা সহায়ক হয়। তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট এর সাথে থাকবেন এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর গুলো সঠিক ও সত্য ভাষায় পোস্ট গুলো উপভোগ করবেন। অবশেষে একটা কথা, আপনার মূল্যবান মনের কথাটা জানাতে পোস্টের নিচে কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট পড়ুন