(i) এই তরঙ্গ কঠিন ও তরল উভয়ের মধ্যে দিয়েই যেতে পারে।
(ii) এই তরঙ্গ সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন।
(iii) পৃথিবীর যত অভ্যন্তরে যাওয়া যায়, ততই এই তরঙ্গের গতিবেগ বাড়তে থাকে।
(iv) ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা নেই।
S তরঙ্গ : P তরঙ্গের থেকে কম গতিবেগ সম্পন্ন ও ভূপৃষ্ঠে পরে এসে যে-তরঙ্গ আঘাত করে, তাকে S তরঙ্গ বলে ।
এস(S) তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য বৈশিষ্ট্যঃ-
(i) S তরঙ্গের গতিবেগ P তরঙ্গের থেকে কম। কারণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য ছােটো।
(ii) S তরঙ্গ শুধু কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে পারে।
(iii) এই S তরঙ্গ নির্দিষ্ট স্তরে হারিয়ে যায় বা প্রমাণ করে এর কোনাে কোনাে অংশ তরল অবস্থায় আছে।
(iv) ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা মাঝারি।
L তরঙ্গ : যে-তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠ বরাবর চারিদিকে ঢেউয়ের মতাে ছড়িয়ে পড়ে, তাকে পৃষ্ঠতরঙ্গ বা ‘Lতরঙ্গ বলে।
এল(L) তরঙ্গের বৈশিষ্ট্যঃ-
(i) এটি খুব কম গতিবেগসম্পন্ন তরঙ্গ। কারণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে বড়াে।
(ii) এটি তির্যক তরঙ্গ ও শুধু কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে যেতে পারে।
(iii) কম্পাঙ্ক সবচেয়ে কম।
(iv) এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি।
(v) P ও S তরঙ্গের শক্তি থেকে L তরঙ্গ সৃষ্টি হয়।
(vi) এটি তির্যক তরঙ্গ।
৩. অশ্মমণ্ডল বা শিলামণ্ডল বলতে কী বােঝাে ?
উত্তর ঃ- ক্রোফেসিমা বা ঊর্ধ্বগুরুমণ্ডলের ওপরে অবস্থিত মহাদেশীয় স্থলভাগ ও মহাসাগরীয় স্থলভাগের অংশ শিলামণ্ডল নামে পরিচিত। এটি গ্রিক শব্দ Lithosযার অর্থ শিলা ও ‘Sphere, যার অর্থ মণ্ডল থেকে এসেছে।
অশ্মমন্ডল বা শিলামন্ডলের বৈশিষ্ট্য ঃ-
গভীরতা :- মহাদেশীয় তলদেশে প্রায় 55-60 কিমি মসাগরীয় তলদেশে প্রায় 5-10 কিমি গভীর।
পুরুত্ব :- শিলামণ্ডলের 3/10 অংশ মহাদেশীয় ও 7/10 অংশ মহাসাগরীয় ।
উপাদান:- প্রধানত সিলিকা, অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, অক্সিজেন বিভিন্ন জৈব পদার্থ দ্বারা গঠিত।
প্রধান শিলাসমূহ:- আগ্নেয়, রূপান্তরিত, পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত।
৪. ক্ষুদ্ধমণ্ডল বা অ্যাথেনােস্ফিয়ার সম্পর্কে লেখো।
উত্তর ঃ- ভূত্বক থেকে 60 -200 কিমি ভিতরে গুরুমণ্ডলের ওপরের স্তরে জেলির মতাে থকথকে, সান্দ্র প্লাস্টিকের মতো যে দুর্বল স্তর অবস্থান করছে তা অ্যাঙ্গেনােস্ফিয়ার বা ক্ষুর্ধমণ্ডল নামে পরিচিত। গ্রিক শব্দ ‘অ্যাসথেনাে, যার অর্থ দুর্বল ও ‘ স্ফিয়ার’, যার অর্থ মণ্ডল; শব্দ দুটি থেকে এর নামকরণ হয়েছে।
ক্ষুদ্ধমণ্ডল বা অ্যাথেনােস্ফিয়ারের বৈশিষ্ট্য ঃ-
গভীরতা :- ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 60-200 কিমি গভীরে।
উয়তা :- প্রায় 1,400°C-1,700°C।
বিশেষত্ব :- তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিদারণের জন্য সান্দ্র, স্থিতিস্থাপক অবস্থায় স্তরটি বিদ্যমান।
ভূকম্পীয় তরঙ্গের গতি :- P ও S তরঙ্গের গতিবেগ 150-200 কিমির কাছে খুব কমে যায়, তাই একে Low Velocity Zone বলে।
অবস্থানঃ- মহাদেশীয় মহাসাগরীয় পাত গুলি এই স্তরের উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।
৫. অ্যাস্থেনােস্ফিয়ারকে কেন ক্ষুপমণ্ডল বলা হয় ?
উত্তর ঃ- গুরুমণ্ডলের ওপরে অবস্থিত অ্যাথেনােস্ফিয়ারের উপাদানসমূহ প্রচণ্ড তাপ, চাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে তরল, অর্ধ-থকথকে ম্যাগমার সৃষ্টি করে। এই ম্যাগমার সঙ্গে গ্যাস ও জলীয় বাপের তারতম্যের কারণেই। যে-পরিচলন স্রোতের (Convectional Current) সৃষ্টি হয়, তার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠে ফাটল সৃষ্টি হয়। ওই ফাটল দিয়ে অ্যাথেনােস্ফিয়ারের ম্যাগমা বাইরে বেরিয়ে এসে ভূমিকম্প সৃষ্টি করে। অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আগ্নেয় পর্বত, মহিরণ, মহাসাগর প্রভৃতি সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও এর ব্যাপক রূপান্তর ঘটে। এই কারণেই অ্যাথেনােস্ফিয়ারের অপর নাম ক্ষুন্ধমণ্ডল।
৬. পৃথিবীর গুরুমণ্ডল (Mantle of Earth) সম্পর্কে আলােচনা করাে।
উত্তর ঃ- ভূত্বকের নীচে এবং কেন্দ্রমণ্ডলের ওপরে অবস্থিত প্রধানত লােহা, নিকেল, ক্রোমিয়াম, সিলিকন, ম্যাগনেশিয়াম সমন্বিত স্তরটি গুরুমণ্ডল বা ম্যান্টল নামে পরিচিত।
গুরুমন্ডল এর বৈশিষ্ট্যঃ –
গভীরতা ;- ভূত্বকের নীচ থেকে প্রায় 2,900 কিমি গভীর। |
উপাদান :- প্রধানত লােহা, নিকেল, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন সমন্বিত।
ঘনত্ব:- প্রায় 3.4 গ্রাম থেকে 5.6 গ্রাম/প্রতি ঘনসেমি।
উপবিভাগ:- উন্নতা, চাপ, শিলার ঘনাঙ্কের তারতম্য
অনুযায়ী দুটি ভাগে বিভক্ত—
অন্তঃ গুরুমণ্ডল :- গভীরতা প্রায় 700–2,900 কিমি। প্রধানত নিকেল (Ni), ফেরাস বা লােহা (Fe), সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেশিয়াম (Mg) দ্বারা গঠিত বলে এই স্তরটি NIFESIMA নামে পরিচিত।
বহিঃগুরুমণ্ডল : গভীরতা প্রায় 30-700 কিমি। প্রধানত ক্রোমিয়াম (Cr), ফেরাস (Fe), সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেশিয়াম (Mg)-এর আধিক্য থাকায় CROFESIMA নামে পরিচিত।
৭. পৃথিবীর কেন্দ্রমণ্ডল (Core) সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর ঃ- পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে ভূকেন্দ্রের চারপাশে প্রধানত লােহা, নিকেল প্রভৃতি অত্যন্ত ভারী পদার্থ কেন্দ্রীভূত হয়ে যে-স্তর গঠন করেছে, তাকে কেন্দ্রমণ্ডল বলে।
পৃথিবীর কেন্দ্রমন্ডলের বৈশিষ্ট্যঃ-
i) গভীরতা :- 2,900 কিমি থেকে 6,370 কিমি গভীর।
ii) পুরুত্ব:- স্তরটি প্রায় 3,470 কিমি পুরু।
(iii) গড় উয়তা:- প্রায় 5,000°C।
(iv) উপাদান:- প্রধানত নিকেল (Ni) ও লােহা বা ফেরাস (Fe)। এ ছাড়াও অক্সিজেন, গন্ধক প্রভৃতি দেখা যায়। নিকেল ও ফেরাস-এর প্রাধান্য থাকায় স্তরটি ‘নিফে’ (NIFE) নামে পরিচিত।
(v) ঘনত্ব:–অন্যান্য স্থানের তুলনায় ঘনত্ব সর্বাধিক 9.1.1 গ্রাম পার ঘন সেমি ।
(vi) চাপঃ- চাপ সর্বাপেক্ষা বেশি প্রায় 3500 কিলবার
(vii) উপবিভাগ:- উন্নতা, চাপ, ঘনত্ব, পদার্থসমূহের অবস্থা প্রভৃতির তারতম্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীরা এই মণ্ডলকে দুটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা –
অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল : এর গভীরতা প্রায় 5,100-6,370 কিমি।
i) এই স্তরের চাপ, তাপ, ঘনত্ব বহিঃকেন্দ্রমণ্ডলের তুলনায় বেশি।
ii) উপরের অংশের ঘনত্ব 12.৪ গ্রাম/ঘনসেমি ও নীচের অংশের ঘনত্ব 13.1 গ্রাম/ঘনসেমি।
iii) অত্যধিক চাপে পদার্থগুলি কঠিন অবস্থায় রয়েছে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মান বেশি
বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল : এর গভীরতা প্রায় 2,900–5,100 কিমি । অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডলের ওপরে অবস্থিত।
i) চাপ তাপ ঘনত্ব অন্তঃস্থ কেন্দ্রমন্ডলের তুলনায় কম ।
ii) উপরের অংশে 9.9 ঘনত্ব গ্রাম/ ঘন সেমি ।
iii) লোহা নিকেল কোবাল্ট প্রকৃতি মূলত তরল অবস্থায় রয়েছে । মাধ্যাকর্ষণ শক্তির মান শূন্য ।
৮. পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের বিভিন্ন বিযুক্তিরেখার (Discontinuity) পরিচয় দাও।
উত্তর ঃ- ভূপৃষ্ঠ থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত যেখানে যেখানে ভূমিকশেপর তরঙ্গের গতিবেগ পরিবর্তিত হয়, সেই অঞ্চলকে ভূতত্ত্ববিদরা বিযুক্তিরেখা বলেছেন। পৃথিবীর অভ্যন্তরের বিযুক্তিরেখাকে 5টি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
কনরাড বিযুক্তিরেখা (Conrad Discontinuity): ভূত্বকের সিয়াল ও সিমা স্তরের মাঝে অবস্থিত বিযুক্তিরেখাকে কনরাড বিয়ুক্তিরেখা বলে। অস্ট্রিয়ার ভূবিজ্ঞানী কনরাড এই বিযুক্তিরেখা আবিষ্কার করেন। ভূ-অভ্যন্তরে গড়ে 10-12 কিমি নীচে এই বিযুক্তিরেখা অবস্থিত।
মােহাে বিযুক্তিরেখা (Moho Discontinuity): ভূত্বক ও গুরুমণ্ডলের মাঝে অবস্থিত বিযুক্তিরেখা মােহাে বিযুক্তিরেখা বলে। ভূ-অভ্যন্তরে গড়ে 30 কিমি নীচে এই বিযুক্তিরেখা অবস্থিত। বিজ্ঞানী মােহােরােভিসিক এই বিযুক্তিরেখা আবিষ্কার করেন।
রেপিত্তি বিযুক্তিরেখা (Repetti Discontinuity): ভূত্বকের দুটি স্তর ক্রোফেসিমা বা উর্ধ্বগুরুমণ্ডল এবং নিফেসিমা বা নিম্ন গুরুমণ্ডলের মাঝে অবস্থিত বিযুক্তিরেখা রেপিত্তি বিযুক্তিরেখা নামে পরিচিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 700 কিমি গভীরতায় এই বিযুক্তিরেখা অবস্থিত।
লেহম্যান বিযুক্তিরেখা (LehmanDiscontinuity) :- কেন্দ্রমণ্ডলের ভিতরের স্তর অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল ও বাইরের স্তর বহিঃকেন্দ্রমণ্ডলের মধ্যে যে বিযুক্তিরেখা আছে, তাকে লেহম্যান বিযুক্তিরেখা বলে। বিজ্ঞানী লেহম্যান এটি আবিষ্কার করেন। এটি প্রায় 5,100 কিমি গভীরে অবস্থিত ।
গুটেনবার্গ বিযুক্তি রেখা(Gutenberg Discontinuity) :- গুরুমণ্ডল ও কেন্দ্রমণ্ডলের মাঝে যে বিযুক্তিরেখা অবস্থিত, তাকে গুটেনবার্গ বিযুক্তিরেখা বলে। 1912 খ্রিস্টাব্দে ভূবিজ্ঞানী গুটেনবার্গ এটি আবিষ্কার করেন। 2900 কিমি গভীরতায় এই বিযুক্তিরেখা অবস্থিত।
তোকে বন্ধুরা অষ্টম শ্রেণির প্রথম অধ্যায়ের প্রশ্ন উত্তর গুলো তোমাদের কেমন লাগলো তবে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন তবে আমি তোমাদের এই আর্টিকেলটি মাধ্যমে শুধুমাত্র পৃথিবীর অন্দরমহল সম্বন্ধে যেসব প্রশ্নগুলো আছে সেসব প্রশ্নগুলো আলোচনা করেছি । ধন্যবাদ ।