Geography
অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন উত্তর 2022 | ক্লাস 8 ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় | অস্তিত পৃথিবী
অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন উত্তর 2022 | ক্লাস 8 ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় | অস্তিত পৃথিবী
অষ্টম শ্রেণীর ভূগোল প্রশ্ন উত্তর 2022 | ক্লাস 8 ভূগোল দ্বিতীয় অধ্যায় | অস্তিত পৃথিবী |
১. অগ্ন্যুগম (Volcano) কী ? অগ্ন্যুৎপাতের কারণগুলি লেখো।
উত্তর ঃ- অগ্ন্যুদগম: ভূ-অভ্যন্তরস্থ গলিত ও সান্দ্র ম্যাগমা, বিভিন্ন গ্যাস, জলীয় বাষ্প ভূত্বকের কোনো ফাটল বা গহ্বর বরাবর বিস্ফোরণ সহ প্রবল বেগে অথবা ধীরে শান্তভাবে ভূপৃষ্ঠে যে-প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে আসে, তাকে অগ্ন্যুগম (Volcanism) বলা হয়।
অগ্ন্যুৎপাতের কারণগুলি হল—
তাপ ও চাপের প্রভাব:- পৃথিবীর ভূ অভ্যন্তরভাগও অত্যন্ত উত্তপ্ত অবস্থায় আছে। গুরুমণ্ডলে যার উন্নতা 2000°C। এই উন্নতায় সব শিলাই গলিত অবস্থায় থাকার কথা, কিন্তু ওপরে চাপের ফলে শিলাগুলি গলে প্লাস্টিকের মতো প্রবাহিত হয়। এই গলিত ম্যাগমার ঘনত্ব কম হয়, ফলে হালকা হয়ে উপরে উঠতে থাকে এবং এক সময় জলীয় বাষ্প, গ্যাস ও বাষ্পে রূপান্তরিত হয়ে ভূপৃষ্ঠের কোনো দুর্বল অংশ দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসে।
পাত সঞ্চালন : – পাতগুলির তিন ধরনের গতির জন্যে অগ্ন্যুৎপাত দেখা যায়। (1) দুটি পাত পরস্পর মুখোমুখি সংস্পর্শের ফলে একটি পাত অপর পাতের তলায় ঢুকে যায় ও গলে গিয়ে ফাটল পথে বের হয়ে আসে। (2) দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে গেলে তার মাঝের অংশ থেকে ম্যাগমা বের হয়ে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করে।
হটস্পট : – পাতের মধ্যভাগে হটস্পট অবস্থান করলে সেখানে তেজস্ক্রিয় পদার্থের উত্তাপজনিত কারণে ম্যাগমার উর্ধ্বমুখী প্রবাহ লক্ষ করা যায়।
অন্যান্য পোস্ট:-
২. আগ্নেয়গিরির বিভিন্ন অংশগুলি কী কী ?
উত্তরঃ- ক্যালডেরা : আগ্নেয়গিরির যে-গহ্বরের মাধ্যমে অগ্ন্যুৎপাত হয় তাকে জ্বালামুখ বলা হয়। বৃহদায়তন জ্বালামুখকে বলে ক্যালডেরা।
ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ : – যেখান থেকে ম্যাগমা এসে আগ্নেয়গিরির তলদেশে সঞ্চিত হয়, তাকে ম্যাগমা প্রকোষ্ঠ বলা হয়। আগ্নেয়গিরিতে ম্যাগমার এক বা একাধিক উৎক্ষেপণ শিরা, উপশিরা ও গৌণ জ্বালামুখ থাকে।
আগ্নেয় শীর্ষ : প্রত্যেক পরবর্তী অগ্ন্যুৎপাতে আগ্নেয়গিরির শঙ্কু আকৃতির শীর্ষদেশ বিস্ফোরণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আগ্নেয় গহ্বর :- সুপ্ত বা মৃত আগ্নেয়গিরিতে ওই শঙ্কু শীর্ষের অবনমিত গহ্বর বা জ্বালামুখে হ্রদের সৃষ্টি হয়। যেমন—টিটিকাকা হ্রদ একটি আগ্নেয় পর্বতের শীর্ষে অবস্থান।
৩. আগ্নেয়গিরির প্রকৃতি ও অগ্ন্যুৎপাতের সক্রিয়তা অনুসারে শ্রেণিবিভাগ করে বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তরঃ- প্রকৃতি ও অগ্ন্যুৎপাতের সক্রিয়তা অনুসারে আগ্নেয়গিরিগুলিকে প্রধান তিন ভাগে ভাগ করা হয়।
জীবন্ত বা সক্রিয় :- যেসব আগ্নেয়গিরি তাদের উৎপত্তিকাল থেকে শুরু করে বর্তমানেও ঘনঘন অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে চলেছে, তাদের জীবন্ত বা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি বলে। বিস্ফোরণের মাত্রা অনুসারে এটি দুটি ভাগে বিভক্ত—
(i) অবিরাম আগ্নেয়গিরি;- যে-সমস্ত জীবন্ত আগ্নেয়গিরি থেকে অনবরত লাভা, গ্যাস, ভস্ম বেরিয়ে চলেছে তাদের অবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে।
বৈশিষ্ট্যঃ-
(i) উচ্চতা: আগ্নেয়গিরির উচ্চতা দিন দিন বৃদ্ধি পায়।
(ii) আকৃতি: চ্যাপটা আকৃতির হয়।
(iii) ঢাল: অনেক কম থাকে, 5°-7° হয়।
(iv) উদাহরণ: ইটালির ভিসুভিয়াস।
সবিরাম আগ্নেয়গিরি:- যে-সমস্ত আগ্নেয়গিরিতে কিছু দিন বা কয়েক বছর অন্তর অগ্ন্যুৎপাত হয় তাদের সবিরাম আগ্নেয়গিরি বলে।
বৈশিষ্ট্যঃ-
(i) উচ্চতা: দিন দিন বৃদ্ধি পায়।
(ii) পাতের কার্য: এখানকার পাতগুলির কার্যক্ষমতা সতেজ থাকে।
(iii) উদাহরণ : ইন্দোনেশিয়ার ক্রাকাতোয়া।
সুপ্ত আগ্নেয়গিরি;- যেসব আগ্নেয়গিরি থেকে এখন অগ্ন্যুৎপাত হচ্ছে না, কিন্তু ভবিষ্যতে হতে পারে, সেগুলিকে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি বলে।
বৈশিষ্ট্যঃ-
(i) এককালীন প্রচুর আগ্নেয় পদার্থ নির্গত হওয়ার পর ম্যাগমা প্রকোষ্ঠে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় সেগুলি সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
(ii) অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বহুদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর কোনো কারণে ধীরে ধীরে ম্যাগমা প্রকোষ্ঠে আবার চাপবৃদ্ধি ঘটলে এগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে। উদাহরণ— জাপানের ফুজিয়ামা।
মৃত আগ্নেয়গিরি;- অতীতে যেসব আগ্নেয়গিরি সক্রিয় ছিল, কিন্তু বর্তমানে তার সক্রিয়তার কোনো চিহ্ন নেই, ভূতাত্ত্বিক মতে তাদের মৃত আগ্নেয়গিরি বলে।
বৈশিষ্ট্যঃ-
(i) ক্ষয়প্রাপ্ত শিখর দেশ।
(ii) ভবিষ্যতে কোনো অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা নেই বলে পরীক্ষায় দেখা গেছে ।
৪. গিজার সৃষ্টির কারণ ও বৈশিষ্ট্য
উত্তর ঃ- সময়ান্তরে প্রবল বেগে স্তম্ভাকারে ফোয়ারার মতো উয় জল ও বাষ্প উৎক্ষিপ্ত হয়, তাকে ‘গিজার’ বলে।
সৃষ্টির কারণঃ- (i) ম্যাগমার সংস্পর্শে : ভৌমজল খুব গভীরে গিয়ে ম্যাগমার প্রচণ্ড তাপে গরম হলে গিজার সৃষ্টি হয়।
(ii) পরিচলন প্রক্রিয়ায় জলের ঊর্ধ্বগমন : অতি- উন্ন জল পরিচলন প্রক্রিয়ায় উপরের দিকে উঠতে থাকায় গিজারের উৎপত্তি ঘটে।
(iii) বাষ্পের চাপ: ভূগর্ভের প্রচণ্ড উত্তাপে জল বাষ্পে পরিণত হয় এবং এই বাস্পের চাপ অত্যধিক হলে তা প্রস্রবণ নলের জলকে ঊর্ধ্বে উৎক্ষেপণ করে গিজার তৈরি করে।
বৈশিষ্ট্যঃ-
(i) স্তম্ভাকার;- উষ্ণ জল স্তম্ভের মতো বের হয় ।
((ii) বাষ্প নির্গমন: জলের সঙ্গে উত্তপ্ত বাষ্প বেরিয়ে আসে।
(iii) কম উৎক্ষেপণ: বাষ্প ও জলের চাপ কমে গেলে গিজারে কম উৎক্ষেপণ হয় ।
উদাহরণঃ- USA-এর ওল্ড ফেথফুল গিজার।
আরো পড়ুন:-
৫. অগ্ন্যুৎপাতের ক্ষতি-লাভ বর্ণনা করো।
উত্তর ঃ– ক্ষতি গুলো হলঃ- ( a) জনপদ ও নগর ধ্বংস হয়। 79 খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন রোমের পম্পেই নগরী ধ্বংস হয়েছিল।
(b) জীবন ও সম্পদ ধ্বংস হয়। উদ্ভিদ ও বনভূমি ধ্বংস হয়।
(c) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর বিনষ্ট হয়ে অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে চলে আসে ও মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীদের ক্ষতি করে।
(d) রঙিন মেঘ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়লে সূর্যের উত্তাপ আসতে পারে না, তাই বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
(e) আগ্নেয় ভস্ম বৃষ্টির জল ও বরফগলা জলের সঙ্গে মিশে বিপজ্জনক কর্দম প্রবাহের সৃষ্টি করে। এর ফলেও বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়।
(f) সমুদ্রের নীচে অগ্ন্যুৎপাত হলে যে-সুনামি হয়, তার ফলেও প্রবল ধ্বংসলীলা সাধিত হয়।
লাভ গুলি হল ঃ-
(a) লাভা মৃত্তিকার সৃষ্টি হয়।
(b) শীতল অঞ্চলের উষ্ণ প্রস্রবণ ওই এলাকার মানুষের উপকারে আসে ।
(c) ভূতাপশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।
(d) আগ্নেয়গিরির শিরা ও আগ্নেয় পথের শিরা থেকে অনেক সময় মূল্যবান খনিজ ও রত্ন পাওয়া যায়।
আরো পড়ুন:-
6. প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা ?
উত্তর ঃ- ‘মেখলা’ কথার অর্থ ‘কোমর বন্ধনী’। পৃথিবীর অধিকাংশ আগ্নেয়গিরি প্রশান্ত মহাসাগরকে বেষ্টন করে মালার আকারে দক্ষিণ আমেরিকার হর্ন অন্তরীপ থেকে শুরু করে আন্দিজ ও রকি পর্বতমালা হয়ে আলাস্কার মধ্যে দিয়ে কামচাটকা, সাখালিন, জাপান ও ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ হয়ে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। পৃথিবীর প্রায় 70 শতাংশ আগ্নেয়গিরি (যার সংখ্যা প্রায় 304টি) বলয়াকারে প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে অবস্থান করায় একে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নি বলয় বলে। এখানকার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আগ্নেয়গিরি হল— জাপানের ফুজিয়ামা, হাওয়াই দ্বীপ-এর মৌনালোয়া প্রভৃতি।
৭. নুয়ে আর্দেন্তী?
উত্তর ঃ– পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মার্টিনিক দ্বীপের আগ্নেয়গিরি থেকে অ্যান্ডেসাইট যুক্ত অত্যন্ত সান্দ্র লাভা, উয় গ্যাস ও জলীয় বাষ্প আগ্নেয়গিরির ঢাল বরাবর অত্যন্ত তীব্রবেগে হিমানী সম্প্রপাতের মতো বিধ্বংসী আগুনের প্রবাহের আকারে নেমে আসে। একে নুয়ে আর্দেন্তি বলে। 1902 খ্রিস্টাব্দে মাউন্ট পিলির 400°C উম্ন লাভার উদ্গিরণে পিয়েরি শহরের 3000 অধিবাসী প্রাণ হারায়।
৮. ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ ?
উত্তর ঃ- ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত সিসিলির উত্তরে লিপারি দ্বীপের স্ট্রম্বলি আগ্নেয়গিরিতে প্রতিবার বিস্ফোরণের সময় অত্যন্ত উজ্জ্বল গ্যাস ও 1000°C উম্ন লাভা নির্গত হয়ে ভূমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী ভিলসেলজো ও গিনাস্ত্রো নামক দুটি গ্রামকে আলোকিত করে। কথিত আছে ভূমধ্যসাগরের সমুদ্রগামী জাহাজগুলির নাবিকদের স্ট্রম্বলি আগ্নেয়গিরি light house (সংকেত)-এর কাজ করত বলে স্ট্রম্বলিকে ভূমধ্যসাগরের আলোকস্তম্ভ বলে ।
৯. ক্যালডেরা?
উত্তর ঃ- আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ প্রচণ্ড ভয়ংকর অগ্ন্যুৎপাতে ধসে পড়লে বা বিস্ফো রণের ফলে বিচ্যুত হলে বৃত্তাকার বা ডিম্বাকার কড়াই আকৃতির বৃহৎ আকারের জ্বালামুখ সৃষ্টি হয়, ক্যানারি দ্বীপের ‘LA CALDERA’ হ্রদের নামানুসারে এগুলিকে ‘ক্যালডেরা বলে। এর মধ্যভাগে জল জমে অনেক সময়
ক্যালডেরা হ্রদ সৃষ্টি হয়।